বাংলাদেশের নারী
- Written by Super User
- Published in আজকের নারী
- Hits: 78
- Print , Email
বাংলাদেশের নারীদের সামাজিক মর্যাদা বহুবছর ধরে সংগ্রাম করে বিশাল প্রাপ্তিকে বুঝানো হয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশি নারীরা বৃহদাকারে সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে। বিগত চার দশকে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, উন্নততর কর্ম প্রত্যাশা, উন্নত শিক্ষা এবং তাদের অধিকার রক্ষার্থে নতুন আইন প্রণয়ন দেখা গেছে। ২০১৩ অনুসারে, বাংলাদেশেরপ্রধানমন্ত্রী, জাতীয়সংসদেরস্পিকার, বিরোধীদলীয়নেত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবাই নারী ছিলেন।
২০১১ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত আদমশুমারীর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের নারীর সংখ্যা ৭কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার। পুরুষ ও নারীর সংখ্যার অনুপাত ১০০:১০৩। এদেশে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের গড় আয়ু ৬৩ বছর।
ইতিহাস
স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত দেখায় যে ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশে নারীদের সামাজিক মর্যাদা পুরুষের চাইতে যথেষ্ট কম ছিল। নারীদের, প্রথা এবং রীতিনীতির দিক থেকে, জীবনের সর্বক্ষেত্রে পুরুষের অধস্তন করে রাখা হয়েছে; বৃহৎ অংশের ব্যক্তিস্বাধীনতা ধনিদের সুবিধায় অথবা হতদরিদ্রের প্রয়োজনে ছিল।
নারীদের বর্তমান অবস্থান
স্বাস্থ্য ও পুষ্ঠি
বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ নারী পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। যাদের প্রায় ৪৩ শতাংশের উপর গর্ভকালীন অবস্থায়। বাংলাদেশে প্রতি ঘন্টায় গর্ভ ও প্রসবজনিত জটিলতায় প্রায় ৩ জন মা মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র ১৩ শতাংশ বাংলাদেশী নারী প্রসবের সময় দক্ষ ধাত্রীর সহায়তা পায়। বাংলাদেশে গর্ভবতী নারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশের বয়স ১৯ বছরের নিচে এদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ নারী পরিপূর্ণ পুষ্টির অভাবে রক্তশূণ্যতায় ভোগে।
বিবাহ
বাংলাদেশের ৬৪ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর হবার আগেই মা হয়ে যান।
গর্ভপাত
১৫ থেকে ১৯ বছরেই অন্ত:সত্ত্বা কিংবা মা হয় এক তৃতীয়াংশ। সারাবিশ্বে প্রতি মিনিটে ৩৮০ জন নারী গর্ভবতী হয়, ১৮০ জন নারী অপরিকল্পিত বা অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ করে, ১১০ জন নারী গর্ভধারণ সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগে, ৪০ জন নারী অনিরাপদ গর্ভপাত ঘটায় এবং ১ জন নারী মারা যায়।
নারীদের মধ্যে প্রথম যারা
- ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্রথম নারী ভিপি—মাহফুজাখানম
- ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রথম নারী শহীদ—প্রীতিলতাওয়াদ্দেদার
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী—লীলানাগ
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী শিক্ষক—করুণাকণাগুপ্তা,ইতিহাস বিভাগ
- দাবায় প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা গ্রান্ডমাস্টার—রানীহামিদ
- ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম নারী অধ্যক্ষ—ডা. হোসনেআরাতাহমিন
- বাংলাদেশ সংবিধান রচনা কমিটির একমাত্র নারী সদস্য—বেগমরাজিয়াবানু
- বাংলাদেশব্যাংকের প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর- নাজনীনসুলতানা
- এভারেস্ট জয়ী প্রথম বাংলাদেশী নারী- নিশাতমজুমদার
- বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী উপাচার্য- ফারজানাইসলাম
- বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্রথম নারী কোষাধ্যক্ষ- গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ইফফাতফারাহমৌসুমি
বাংলাদেশের নারীদের সময়পঞ্জিকা
- খ্রীঃ পূর্ব ১২০০-৯০: উত্তর ও পশ্চিম ভারতে আর্যদের প্রবেশ শুরু ও মাতৃপ্রাধান্য সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন।
- খ্রীঃ পূর্ব ৩২৭: মেসেনা অবরোধ যুদ্ধে ভারতীয় নারীদের অস্ত্রধারণ।
- খ্রীঃ পূর্ব ২০০: পতঞ্জলি কর্তৃক অস্ত্রধারী শক্তিকি সম্প্রদায়ের উল্লেখ।
- খ্রীঃ পূর্ব ৬০০: ব্রহ্মবাদীদের সভায় বিদূষী নারী গার্গীর প্রশ্ন উত্থাপন।
- ৯০০-১০০০ খ্রিষ্টাব্দ: চর্যাপদে তান্ত্রিক ধারার সাধনমার্গে নারীকে সাধন সঙ্গীনী হিসেবে গ্রহণ।
- ১১০০ খ্রিষ্টাব্দ: ডাকের বচন, এ্যালকেমি চর্চায় গ্রামীণ নারী সমাজের অংশগ্রহণ।
- ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ: বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রবেশ, ব্যাপক ধর্মান্তর ও ধর্মান্তরিত বাঙালী নারীদের মুসলিম আইন অনুযায়ী সম্পত্তি, দেনমোহর, তালাক ও পুনর্বিবাহের মতো গুরত্বপূর্ণ কিছু অধিকারপ্রাপ্তি।
- ১৩০০-১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ: বাংলা মঙ্গলকাব্যের উদ্ভব ও বিকাশ, বাংলায় লোকধর্ম ও নারীদেবতা, নারী পুরোহিত শ্রেণীর অভূদ্যয়।
- ১৪০০-১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ: বাংলায় বৈষ্ণব আন্দোলন, বৈষ্ণব ধর্মে সর্বস্তরের নারীর সক্রিয় অন্তর্ভুক্তি, নারী গুরু ও নারী মহান্ত শ্রেণীর উদ্ভব।
- ১৩৫১-১৫৭৭ খ্রিষ্টাব্দ: ফিরোজ তুঘলক ও সিকান্দর আলী লোদী কর্তৃক বাঙালী মুসলিম নারীর চলাচলের স্বাধীনতা হ্রাস। বোরখা ও ঢাকা গাড়ি ছাড়া মেয়েদের চলাচল নিষিদ্ধ, বাড়িতে জেনানা মহল তৈরি।
- ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দ: মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর রামায়ণ অনুবাদ।
মো: আতিকুল ইসলাম